স্বাধীনতাকে গোলাপ ফুল ভেবে আমরা বাংলাদেশিরা ভুল করেছি বারবার। প্রতিবার স্বাধীনতার সুঘ্রাণ নিয়ে দেশটাকে শাসকের হাতে উঠিয়ে দিয়ে কন্যাদায়মুক্ত হতে চেয়েছি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ কিংবা ১৯৯০ এর সফল গণঅভ্যুত্থানকে তাই প্রকৃত স্বাধীনতায় রূপ দেওয়া সম্ভব হয়নি কখনোই। জবাবদিহিতাবিহীন রাষ্ট্রযন্ত্র নানারূপে শোষক হয়ে আবির্ভূত হয়েছে প্রত্যেকবার। ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানকে ব্যর্থ হতে না দিতে চাইলে আমাদের স্বাধীনতার সংজ্ঞায়নে পরিবর্তন আনা অবশ্য কর্তব্য।
স্বাধীনতা আসলে গোলাপ চারার মতন। এখানে একবার সুঘ্রাণ নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। স্বাধীনতার সুঘ্রাণ অবাধ বহমান রাখতে চাইলে নিয়মিত পরিচর্যা অতীব জরুরি। গোলাপ চারা বাঁচিয়ে রাখতে চাইলে নিয়মিত পানি দিতে হয়, কীটনাশক দিতে হয়, জীবজন্তুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে হয়। ঠিক তেমনি বাকস্বাধীনতা, ন্যায়বিচার আর আইনের সুশাসনের কেবল প্রতিষ্ঠা নয় বরং প্রবহমানতা নিশ্চিতকরণই পারে একমাত্র জুলাই বিপ্লবের সুঘ্রাণ চিরস্থায়ী করতে।
জুলাই বিপ্লব বিগত ১৫ বছরজুড়ে স্বৈরাচারের করা প্রতিটি অন্যায় অবিচারে জনমনে জমতে থাকা ক্রোধের গণবিস্ফোরণ। পিলখানা ট্র্যাজেডি, শাপলা চত্বরের গণহত্যা, যেকোনো ন্যায্য অধিকারের দাবিতে পথে নামা ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমিকের উপরে পুলিশ ও সরকারি পেটোয়া বাহিনীর সশস্ত্র আক্রমণ, বিচারবহির্ভূত সকল গুম-খুনের উপরে স্বেচ্ছাচারী হাসিনা গত দেড়যুগে দুর্নীতি ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলো। তাই স্বৈরাচারের মসনদ গুঁড়িয়ে দিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে ছাত্রজনতা রাস্তায় নেমে এসেছে। বন্দুকের নলের সামনে অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করেনি।
গণবিপ্লবের হাজারো শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা রক্ষা করা প্রতিটি সুনাগরিকের পবিত্র দায়িত্ব। স্বৈরাচারের গণমত নিয়ন্ত্রণের অন্যতম বড় হাতিয়ার ছিলো তোষামোদি হলুদ সাংবাদিকতা আর বাকস্বাধীনতার উপর অবৈধ তদারকি। ইলেকট্রনিক মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের বৈধতা দিতে জাতীয় সংসদে পাশ হয় বহুল সমালোচিত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’।
ভিন্নমত প্রকাশের অপরাধে গ্রেফতার হওয়া লেখক মুশতাক আহমেদের কারাগারে পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন মৃত্যুবরণ করেন। কার্টুনিস্ট কিশোর, আলোকচিত্রী শহীদুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরাসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষকে এই আইনের মারপ্যাঁচে দীর্ঘদিন কারাবাস করতে হয়। স্বৈরাচারী হাসিনার শাসনামলে বাকস্বাধীনতার কবর রচিত হয়। স্বাধীনতার এই প্রথম প্রহরে বাকস্বাধীনতার পুনঃপ্রতিষ্ঠা অতীব জরুরী। একমাত্র বাকস্বাধীনতার প্রবহমানতাই পারে নীতিনির্ধারকদের স্বৈরাচারী মনোভাব নিবৃত্ত করে জবাবদিহিতামূলক রাষ্ট্রযন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে।
সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি ক্ষেত্রে গৃহীত প্রতিটি সিদ্ধান্তের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ, যৌক্তিক সমালোচনা এবং বিকল্প মত প্রদর্শনের অধিকার আজ তাই সময়ের দাবি। বাকস্বাধীনতার অবাধ প্রবাহে অংশীদার হতে ‘অঙ্কুর ইন্টারন্যাশানাল’ এর পৃষ্ঠপোষকতায় আজ থেকে যাত্রা শুরু করছে আমাদের নিউজ পোর্টাল ‘প্রহরান্ত’। অঙ্কুরের সকল অঙ্গসংগঠনের মত আমরাও সততা ও নিষ্ঠার প্রশ্নে অবিচল। আমরা দৃঢ় প্রত্যয়ী সত্যের সন্ধানে নতুন সূর্যোদয়ে আপনাদের সর্বদা পাশে পাবো।
মঈদুল হাসান ২২ আগস্ট ২০২৪