১৯৯৪ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ আনসার বিদ্রোহের পর ১৯৯৫ সালে জাতীয় সংসদে পৃথক তিনটি সংস্কারমূলক আইন পাস হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত বাংলাদেশ আনসারকে ব্যাটালিয়ন আনসার, আনসার বাহিনী এবং গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী (ভিডিপি)- এই তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়। এর মধ্যে ব্যাটালিয়ন আনসার আধা সামরিক বাহিনী। অন্যদিকে আনসার বাহিনী ও ভিডিপি স্বেচ্ছাসেবী বেসামরিক বাহিনী। আনসার বাহিনী আবার দুইভাগে বিভক্ত – সাধারণ আনসার আর অঙ্গীভূত(affiliated) আনসার।
এবারের আন্দোলনটি মূলত অঙ্গীভূত আনসার বাহিনীর। স্বেচ্ছাসেবী এই বেসামরিক বাহিনীর মূল দায়িত্ব বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে নির্দিষ্ট মেয়াদে চুক্তিবদ্ধ হয়ে নিরাপত্তা এবং জনকল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণ করা। স্বল্পমেয়াদি(৭২ দিন) ট্রেনিং প্রদানের পর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রতিটি সদস্যকে স্মার্টকার্ড প্রদান করা হয়। সরকারি, বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের লোকবল চাহিদা অনুযায়ী দৈনিক ৫৪০ টাকা বেতনে তিন বছরের জন্য তাদের উক্ত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেয়া হয়। বেতন নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বহন করেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে শুধুমাত্র রেশন প্রদান করা হয়। তিন বছরের মেয়াদ অতিক্রান্ত হলে তাদের ৬ মাসের বাধ্যতামূলক রেস্ট টাইমে যেতে হয়। ৬ মাস পর অন্য আরেকটি প্রতিষ্ঠানের চাহিদা এবং তার ওয়েটিং লিস্টের সিরিয়াল অনুযায়ী পরবর্তী নিয়োগ দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, রেষ্ট টাইম চলাকালে এই অঙ্গীভূত আনসার সদস্যদের কোনো বেতন প্রদান করা হয় না।
গত চারদিন ধরে ঢাকাসহ সারাদেশে চলমান আন্দোলনে আনসার সদস্যদের মূল দাবি রেস্ট প্রথা বাতিল এবং তাদের চাকরির জাতীয়করণ। ২৫ আগস্ট (রবিবার) আন্দোলনকারীরা সচিবালয় ঘেরাও করে চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। বিকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে রেস্ট টাইম বিলুপ্ত করে আনসার বাহিনীকে নিয়মিত বাহিনীতে রুপান্তর করার সিদ্ধান্ত জানান। জাতীয়করণসহ অন্যান্য দাবি পর্যালোচনার জন্য চার অঙ্গীভূত আনসার সদস্যসহ মোট সাত সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। উক্ত কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আনসার আন্দোলনের আহ্বায়ক মো. নাসিম মিয়া প্রাথমিকভাবে সাময়িক আন্দোলন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত জানালেও পরবর্তীতে বিক্ষোভকারীরা জাতীয়করণের দাবি না মানা পর্যন্ত সচিবালয় ঘেরাও জারি রাখার ঘোষণা দেয়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে সচিবালয়ে আটকা পড়া উপদেষ্টাসহ দুই হাজারেরও বেশি মানুষকে উদ্ধারের জন্য ছাত্রজনতা এগিয়ে আসলে আন্দোলনকারীরা তাদের উপরে চড়াও হয়। ছাত্রজনতার ধাওয়ায় স্বল্পসময়ের মধ্যেই অবশ্য অধিকাংশ বিক্ষোভকারী ইউনিফর্ম ফেলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। বিক্ষোভকারীদের হামলায় কমপক্ষে ৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
শিক্ষার্থীদের প্রতি হামলার ঘটনায় সারাদেশে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে অঙ্গীভূত আনসার বাহিনীর যথাযথ সংস্কার বা সম্পূর্ণ বাতিলকরণ এবং আক্রমণকারী সদস্যদের যথাযথ শাস্তির জন্য দাবি উঠেছে। ইতোমধ্যে আনসার বাহিনীর পরিচালক ও উপপরিচালক পদে ১৯ জন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। হামলাকারী চার শতাধিক আনসার সদস্য পুলিশের হেফাজতে আছে। ২৬ আগস্ট (সোমবার) থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সচিবালয় ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবনের আশেপাশে মিছিল-মিটিং ও জমায়েত নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
প্রতিবেদক- মঈদুল হাসান